মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০১৫

গানওলার গান-২৭: জাতিস্মর

গানের শিরোনামঃ জাতিস্মর
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
.................................................

** এই গানের প্রতি আমার যে অনুভূতি তা হয়ত আমি কখনো লিখে প্রকাশ করতে পারবো না; শুধু এইটুকু বলতে পারি শেষ নিঃশ্বাসের আগে যদি আমার শখ পূরণের সুযোগ দেওয়া হয় তখনো আমি এই গানকেই বেছে নিব। ইউটিউবে এরকমই মিলে যাওয়া অনুভূতি পেয়েছিলাম যা টুকে রেখে দিলাম- 
         This a Song I would like to hear in the last breath of my life and on my next birth may I come into existence on hearing this song.


অমরত্মের প্রত্যাশা নেই, নেই কোনো দাবি দাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া
মূহুর্ত যায় জন্মের মতো অন্ধ জাতিস্মর
গত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষর
ছেড়া তালপাতা পুঁথির পাতায় নিঃশ্বাস ফেলে হাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া

কালকেউটের ফনায় নাচছে লক্ষীন্দরের স্মৃতি
বেহুলা কখনো বিধবা হয় না, এটা বাংলার রীতি
ভেসে যায় ভেলা এবেলা ওবেলা একই শব দেহ নিয়ে
আগেও মরেছি আবার মরব প্রেমের দিব্যি দিয়ে

জন্মেছি আমি আগেও অনেক মরেছি তোমারই কোলে
মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকেই আবার দেখবো বলে ।।

বারবার ফিরে এসেছি আমরা এই পৃথিবীর টানে
কখনো গাঙুড় কখনো কোপাই কপতাক্ষর গানে
গাঙুড় হয়েছে কখনো কাবেরী কখনো বা মিসিসিপী
কখনো রাইন কখনো কঙ্গো নদীদের স্বরলিপি
স্বরলিপি আমি আগেও লিখিনি এখনো লিখিনা তাই
মুখে মুখে ফেরা মানুষের গানে শুধু তোমাকে চাই

তোমাকে চেয়েছি ছিলাম যখন অনেক জন্ম আগে
তথাগত তার নিঃস্বঙ্গতা দিলেম অস্তরাগে
তারই করুনায় ভিখারিনী তুমি হয়েছিলে একা একা
আমিও কাঙাল হলাম আরেক কাঙালের পেতে দেখা
নতজানু হয়ে ছিলাম তখনো এখনো যেমন আছি
মাধুকরী হও নয়নমোহিনী স্বপ্নের কাছাকাছি
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর প্রেমের পদ্যটাই
বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকে চাই

আমার স্বপ্নে বিভোর হয়েই জন্মেছ বহুবার
আমি ছিলাম তোমার কামনা বিদ্রোহ চিৎকার
দুঃখ পেয়েছ যতবার জেনো আমায় পেয়েছ তুমি
আমি তোমার পুরুষ আমি তোমার জন্মভূমি
যতবার তুমি জননী হয়েছ ততবার আমি পিতা
কত সন্ত্বান জ্বালালো প্রেয়সী তোমার আমার চিতা
বারবার আসি আমরা দুজন বারবার ফিরে যাই
আবার আসব আবার বলব শুধু তোমাকে চাই

গানওলার গান-২৬: যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো

গানের শিরোনামঃ যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
.......................................................................

যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো
কেনা যায় কন্ঠ আমার দফা দফা
রুজিরোজগারের জন্য করছি রফা

দু'হাতের আঙুলগুলো কিনতে পারো
আপোসে নেই আপত্তি নেই আমারো
আমাকে না, আমার আপোস কিনছো তুমি
বল কে জিতলো তবে, জন্মভূমি, জন্মভূমি
যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো

টাকাতেই চলছে সবার পাকস্থলি
কেনা আর বেচা নিয়েই গেরস্থালি
নি-পা-গা-রে রবীন্দ্রনাথ তেরে কেটে
বাজারের খাবার হয়েই ঢুকছে পেটে
প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোও টাকার ব্যাপার
প্রতিবাদ করতে গেলেও খাবার দাবার
সে তুমি শ্রমিক কিংবা তা ধিন ধিনা
পেটে চাই খাবার নয়ত দিন চলে না, দিন চলে না

যদি ভাবো খাচ্ছো আমায় ভুল ভেবেছো
খাওয়া যায় কন্ঠ আমার দফা দফা
বদহজম হলেই কিন্তু দফা রফা
দু'হাতের আঙুলগুলো খেতেও পারো
আপোসে নেই আপত্তি নেই আমারো
আমাকে না, আমার আপোস খাচ্ছো তুমি
বল কে জিতলো তবে, জন্মভূমি, জন্মভূমি
যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো

কেউ বেচে তার মেহনত হাতের পেশি
কেউ বেচে চুলের বাহার এলোকেশি
কেউ বেচে প্রবন্ধ কোনো পত্রিকাতে
আমি বেচি আমার কন্ঠ তোমার হাতে
বেচি আমি আমার পদ্য সুরের ভাষা
বিরক্তি, ঘৃণা এবং ভালোবাসা
আশাটাও পণ্য এখন বাজার দরে
বিকোতে পারলে টাকা আসবে ঘরে, আসবে ঘরে
বেচে দিন পালটে যাবার গানের জবান
কোনোদিন হয়ত অন্য আর কোনো গান
টাকাডুম টাকডুমাডুম নিয়ম ছেড়ে
মানুষের জন্যে সুদিন আনবে কেড়ে, আনবে কেড়ে
যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো

গানওলার গান-২৫ঃ ইচ্ছে করে অন্য একটা আকাশ দেখি

গানের শিরোনামঃ ইচ্ছে করে
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
.................................................

ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে অন্য একটা আকাশ দেখি
একই মাটির ওপর অন্য দিক দিগন্ত
অন্য শস্য অন্য রকম ফুল ফুটন্ত ।।

ইচ্ছে করে

অন্য সময় আসুক এবার ইচ্ছে করে
আমার দেশে সবার দেশে সবার ঘরে
ঘরে এবং বাইরে সময় অন্য হবে
অন্য রকম দিনগুলো যে আসবে কবে?

ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে শুনতে আমার অন্য কথা
অন্য রকম শব্দ এবং নীরবতা ।।
অথবা খুব অন্যরকম দিনে রাতে
ইচ্ছে করে অন্য রকম গান শুনাতে

ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে সবার দু-হাত ভরে উঠুক
সবার রান্না ঘরে ভাতের গন্ধ ছুটুক ।।
ফুলের চেয়ে ভাতের গন্ধ ইচ্ছে করে
আমার দেশে সবার দেশে সবার ঘরে

ইচ্ছে করে

ফুলগুলোকে তাই বলে কি বাদ দিতে চাই
শস্য এবং ফুলের জন্য গান গেয়ে যাই
ইচ্ছে করে স্বপ্ন ধরুক অন্য মানে
বেচে থাকার অন্য কথায় অন্য গানে

ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে অন্য একটা আকাশ দেখি...

গানওলার গান-২৪ঃ খাতা দেখে গান গেও না

গানের শিরোনামঃ খাতা দেখে গান গেও না
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
...................................................

খাতা দেখে গান গেও না
উল্টে পাতা যেতেও পারে
পাতা টাতা উল্টে গেলে
হোচট খাবে বারে বারে

হাওয়া দেয় যখন তখন
হানা দেয় হঠাৎ তুফান
পাতা টাতা উল্টে গেলে
সামনে পাবে ভুল কোনো গান
এ গানের মুন্ডু তখন
বসবে অন্য গানের ঘাড়ে
খাতা দেখে গান গেও না
উল্টে পাতা যেতেও পারে

যুগটাই দমকা হাওয়ার,হাওয়া দেয় হঠাৎ তেড়ে
বলা কি যায় হে কখন, ধাক্কাবে ঝড় যুগের ফেরে

মাথাতেই সামলে রেখ
স্মৃতি আর গানের কথা
বিপদে পড়বে না আর
আসলে ঝড়ো অস্থিরতা
চেনা গান জালবে আলো
পথ দেখাবে অন্ধকারে
খাতা দেখে গান গেও না
উল্টে পাতা যেতেও পারে

গানওলার গান-২৩: নিষিদ্ধ ইশতেহার

গানের শিরোনামঃ নিষিদ্ধ ইশতেহার
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
.................................................

হাত থেকে হাতে, বুক থেকে বুকে
করে নেব গোপনে পাচার
ভালোবাসার নিষিদ্ধ ইশতেহার ।।

আমি কি ডরাই আর ওদের ভ্রুকুটি
আজ আমার ছুটি
সারাদিন প্যাম্ফলেট বুকে নিয়ে ফিরি তার গোপন লালিমা
একদিন মুছে দেবে যুগের কালিমা
তোমার বন্দি দেহে চুপিচুপি এনে দেব
কারামুক্তির সমাচার
ভালোবাসার নিষিদ্ধ ইশতেহার

পরোয়া করি না কার কোথায় পাহারা
আমার চেহেরা ওদের ভালোই জানা
ওরা জানে কবেকার পোষা আক্রোশ
আমার মগজে ঘোরে, চেনে না আপোষ
যতই লুকিয়ে থাক ও নয়ন ঢেকে রাখ
যতই লুকিয়ে থাক ও নয়ন ঢেকে রাখ
ভেঙে দেব দূর্গ তোমার
আমার দাবি নিষিদ্ধ ইশতেহার
ভালোবাসার নিষিদ্ধ ইশতেহার

মানি না ওদের বিধি কি ধানের তরী
আমি বিশ্রী
একরোখা ক্ষতবিক্ষত এই মুখ,আমার স্বভাব
মানো আর নাই মানো, তোমারও অভাব
বরং স্বীকার কর, এসো এই হাত ধর
বরং স্বীকার কর, এসো এই হাত ধর
ঠোঁট রাখ শরীরে আমার
আমি তোমার নিষিদ্ধ ইশতেহার
ভালোবাসার নিষিদ্ধ ইশতেহার

হাত থেকে হাতে, বুক থেকে বুকে
করে নেব গোপনে পাচার
ভালোবাসার নিষিদ্ধ ইশতেহার

গানওলার গান-২২: নাগরিক কবিয়াল

গানের শিরোনামঃ নাগরিক কবিয়াল
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
...................................................

আমি নাগরিক কবিয়াল, করি গানের ধর্ম পালন
আমি নাগরিক কবিয়াল, করি গানের ধর্ম পালন
সকলে ভাবছে লিখছে সুমন, আসলে লিখছে লালন

আমার গানের আনাচে-কানাচে, কন্ঠী বদলে বোষ্টমী আছে
আমার গানের আনাচে-কানাচে, কন্ঠী বদলে বোষ্টমী আছে
তার প্রীতে ডুবল আমার গিটারের আস্ফালন
আমি নাগরিক কবিয়াল, করি গানের ধর্ম পালন

সামলে রাখিস বোষ্টমী তোর, বুকের ভেতর আমার পাজর
সামলে রাখিস বোষ্টমী তোর, বুকের ভেতর আমার পাজর
তোর দরিয়ায় ভাসল গানের পাগলামী আস্ফালন
আমি নাগরিক কবিয়াল, করি গানের ধর্ম পালন

মানুষ আমার সাধন গুরু, সেই মোকামেই যাত্রা শুরু
মানুষ আমার সাধন গুরু, সেই মোকামেই যাত্রা শুরু
চলনে গান সঙ্গে থাকে, বলনে আস্ফালন

নড়ছে চরছে মাথার মধ্যে, খানিক গদ্যে খানিক পদ্যে
নড়ছে চরছে মাথার মধ্যে, খানিক গদ্যে খানিক পদ্যে
কয়রে কথা, দেয় না দেখা নাছোড়বান্দা লালন
আমি নাগরিক কবিয়াল, করি গানের ধর্ম পালন
সকলে ভাবছে লিখছে সুমন, আসলে লিখছে লালন

সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০১৫

গানওলার গান-২১: তিনি বৃদ্ধ হলেন

গানের শিরোনামঃ তিনি বৃদ্ধ হলেন
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
...............................................

তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন
বনস্পতির ছায়া দিলেন, সারাজীবন ।।

এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়
সবুজ কিন্তু আজও মাতায় সুঠাম ডালে
ডালই বলো, ভাতই বলো
গান বাজে তার গেরস্থালির তালে তালে

ওহে, ও গেরস্থ ভীষণ ব্যাস্ত
একটু ভালো চা পাওয়া যায়, কোন দোকানে
ওহে সবজিওয়ালাই বন্ধু তোমার
সবুজ বেচা মানুষ আসে তোমার টানে

ওহে প্রতিদিনের বাজার যাওয়া
থলি হাতে কেটে গেল সারাজীবন
তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন
বনস্পতির ছায়া দিলেন, সারাজীবন

ছিলো ছেলেবেলার রাম ঠ্যাঙানি
কথায় কথায় চোখ রাঙানি নানা কারণ
ছিল ইংরেজি বই পড়তে বসা
দুপুর বেলায় অংক কষা, খেলা বারণ

ছিল রেওয়াজ বিনে রামবকুনি
তানপুরারও ধুকপুকুনি, চারটি তারে
সেই বকুনিটাও গানের জন্য
সাপাট তানের মতই বন্য, বারে বারে

দম ঘুরানো কলের গানে
দম ঘুরানো কলের গানে
ছেলেবেলার আকাশ পানে, বড়ে গোলাম
আকতারি বাঈ তাঁরই পাশে
গানকে যারা ভালোবাসে, তাদের সেলাম

ছিল দিলীপ কুমার রায়ের কন্ঠ
ছিল দিলীপ কুমার রায়ের কন্ঠ
সমস্ত সুর হন্ত দন্ত, হারমোনিয়াম
মেনুহিনের বেহালার
আমীর খানের কন্ঠ অপার, তোমায় সেলাম

ছিল কলাম্বিয়ার বাঘের ছাপ্পা
ছিল কলাম্বিয়ার বাঘের ছাপ্পা
কুকুর শোনে বাংলা টপ্পা, চোঙামুখে
ছিল পঙ্কজ মল্লিকের গলা
অন্ধকারে একলা চলা, মনের সুখে

ছিল রোবসন আর ভোল্গা নদী
ছিল রবসন আর ভোল্গা নদী
গুণ টেনে যায় নিরবধি, রুশকি মাঝি
ছিলো বেটোভেনের সোনাটা
আর সালাম নাজাকাতের কন্ঠে আতশবাজি

ছিল নির্মলেন্দু চৌধুরী
ছিল নির্মলেন্দু চৌধুরী, তার
গলার আওয়াজ মুক্ত দেদার, নদীর মত
ছিল পান্নালালের শান্ত মিঠে
গলায় বুকে বাস্তুভিটে, শান্তি পেতো

এই বনস্পতির ছায়ায় বসে
শুনেছি গান দেঁড়ে ক'ষে, পরম পাওয়া
এই বনস্পতি গান শেখালো
তরঙ্গতে এলোমেলো, নৌকো বাওয়া

দেখো বইছে এখন বয়সকালে
পাতায় পাতায় এবং ডালে, কালের ওজন
তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন
আমায় ছেড়ে বুড়ো হলেন, আমার সুজন 

গানওলার গান-২০: কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়

গানের শিরোনামঃ কতটা পথ পেরোলে
গীতিকার, গায়কঃ কবির সুমন
*বব ডিলানের Blow-in In The Wind গানের ভাবানুবাদ
.....................................................................

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়
কতটা পথ পেরোলে পাখি জিড়োবে তার ডানা
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়
প্রশ্ন গুলো সহজ
আর উত্তরও তো জানা ।।

কত বছর পাহাড় বাঁচে ভেঙে যাবার আগে
কত বছর মানুষ বাঁচে পায়ে শেকল পরে ।।

কবার তুমি অন্ধ সেজে ফাঁকা অনুরাগে
কবার তুমি অন্ধ সেজে ফাঁকা অনুরাগে
বলবে তুমি দেখছিলেনা তেমন ভালো করে

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়
কতটা পথ পেরোলে পাখি জিড়োবে তার ডানা
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়
প্রশ্ন গুলো সহজ
আর উত্তরও তো জানা

কত হাজার পারের পর আকাশ দেখা যাবে
কতটা কান পাতলে তবে কান্না শোনা যাবে ।।

কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে
কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে
বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়
কতটা পথ পেরোলে পাখি জিড়োবে তার ডানা
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়
প্রশ্ন গুলো সহজ
আর উত্তরও তো জানা

রবিবার, ২২ মার্চ, ২০১৫

গানওলার গান-১৯: পেটকাটি চাঁদিয়াল

গানের শিরোনামঃ পেটকাটি চাঁদিয়াল
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
অ্যালবামঃ তোমাকে চাই
...............................................

পেটকাটি চাঁদিয়াল
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগগা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক মাটিতে অবজ্ঞা ।।

বয়স বারো কি তেরো
বয়স বারো কি তেরো রিক্সা চালাচ্ছে
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক ছেলেটাকে ডাকছে
বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চৌদ্দ
রিক্সা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য
ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়
ছেলেটার মন নেই প্যাডেলে বা চাক্কায়
ঐ তো লেগেছে প্যাচ চাঁদিয়ালে বগগায়

শান দেওয়া মানজায়, বগগা ভো কাট্টা
ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে এই নিয়ে আটটা
সওয়ার বাবুটি ভাবে দেরি হয়ে যাচ্ছে
বিচ্ছু ছোড়াটা বড় আস্তে চালাচ্ছে
ওই ছোঁড়া, আরে ওই ছোঁড়া ম'লো যা
আট্টা তো তোর কি?
সওয়ার বাবুটি দেন রেগেমেগে হুমকি

বাবুর  খ্যাকানি শুনে সম্বিত ফিরে পায়
ছেলেটা যে করে হোক রিক্সা চালিয়ে যায়
এই কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে?
এই কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে?
এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে?

যে ছেলেটা প্রাণপণে রিক্সা চালাচ্ছে
মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগগা
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক মাটিতে অবজ্ঞা
পেটকাটি চাঁদিয়াল মোমবাতি বগগা

গানওলার গান-১৮: কখনো সময় আসে

গানের শিরোনামঃ কখনো সময় আসে
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
অ্যালবামঃ তোমাকে চাই
................................................

কখনো সময় আসে, জীবন মুচকি হাসে, ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা
অনেক দিনের পর মিলে যাবে অবসর, আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু'আনা ।।

আশা নিয়ে ঘর করি, আশায় পকেট ভরি, পড়ে গেছে কোন ফাঁকে চেনা আধুলি
হিসেব মেলানো ভার, আয় ব্যয় একাকার, চলে গেলো সারা দিন এলো গোধূলি
সন্ধ্যে নেবে লুটে, অনেকটা চেটেপুটে, অন্ধকারের তবু আছে সীমানা
সীমানা পেরোতে চাই, জীবনের গান গাই, আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু'আনা
কখনো সময় আসে, জীবন মুচকি হাসে, ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা
অনেক দিনের পর মিলে যাবে অবসর, আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু'আনা ।।


গানওলার গান-১৭: তোমাকে চাই

গানের শিরোনামঃ তোমাকে চাই
গীতিকার, সুরকার, গায়কঃ কবির সুমন
অ্যালবামঃ তোমাকে চাই
................................................

প্রথমত আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই
নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই
রাতভোর হলে আমি তোমাকে চাই
সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই
সন্ধ্যের অবকাশে তোমাকে চাই
বৈশাখী ঝড়ে আমি তোমাকে চাই
আষাঢ়ের মেঘে আমি তোমাকে চাই
শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই
অকাল বোধনে আমি তোমাকে চাই

কবেকার কোলকাতা শহরের পথে
পুরোনো নতুন মুখ ঘরে ইমারতে
অগুন্তি মানুষের ক্লান্ত মিছিলে
অচেনা ছুটির ছোঁয়া তুমি এনে দিলে
নাগরিক ক্লান্তিতে তোমাকে চাই
একফোঁটা শান্তিতে তোমাকে চাই
বহুদূর হেঁটে এসে তোমাকে চাই
এ জীবন ভালোবেসে তোমাকে চাই

চৌরাস্তার মোড়ে পার্কে দোকানে
শহরে গঞ্জে গ্রামে এখানে ওখানে
স্টেশন টার্মিনাস ঘাটে বন্দরে
অচেনা ড্রয়িং রুমে চেনা অন্দরে
বালিশ তোশক কাঁথা পুরোনো চাদরে
ঠান্ডা শীতের রাতে লেপের আদরে
কড়িকাঠে চৌকাঠে মাদুরে পাপোশে
হাসি রাগ অভিমান ঝগড়া আপোসে
তোমাকে চাই তোমাকে চাই
তোমাকে চাই তোমাকে চাই
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই
ডাইনে ও বাঁয়ে আমি তোমাকে চাই
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই
না বলা কথায় আমি তোমাকে চাই

শীর্ষেন্দুর কোনো নতুন নভেলে
হঠাৎ পড়তে বসা আবোল তাবোলে
অবোধ্য কবিতায় ঠুমরি খেয়ালে
স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে
সলিল চৌধুরীর ফেলে আসা গানে
চৌরাশিয়ার বাঁশি মুখোরিত প্রাণে
ভুলে যাওয়া হিমাংশু দত্ত'র সুরে
সেই কবেকার অনুরোধের আসরে
তোমাকে চাই তোমাকে চাই
তোমাকে চাই তোমাকে চাই
অনুরোধে মিনতিতে তোমাকে চাই
বেদনার আর্তিতে তোমাকে চাই
দাবি দাওয়া চাহিদায় তোমাকে চাই
লজ্জা দ্বিধায় আমি তোমাকে চাই

অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবিতে
সারারাত জেগে আঁকা লড়াকু ছবিতে
ছিপছিপে কবিতার ছন্দে ভাষায়
গদ্যের যুক্তিতে বাঁচার আশায়
শ্রেণীহীন সমাজের চিরবাসনায়
দিনবদলের খিদে ভরা চেতনায়
দ্বিধা দ্বন্দ্বের দিন ঘোচার স্বপ্নে
সাম্যবাদের ডাক ঘুমে জাগরণে
বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই
ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই
শান্তি অশান্তিতে তোমাকে চাই
এই বিভ্রান্তিতে তোমাকে চাই
প্রথমত আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই